রবিউল শেখ, ধানঘর গ্রামের (পোস্ট: নিমতিতা, থানা: সামশেরগঞ্জ, জেলা: মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ) অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের ক্লাস থ্রিতে পড়া ৮ বছর বয়সী একটি ছেলে গত 19 ই নভেম্বর, 2013 তারিখে ডান কনুইতে একটি চিড় নিয়ে বহরমপুরের বিখ্যাত অর্থোপেডিক সার্জেন ডাঃ অমিয় কুমার বেরার নিজস্ব নার্সিংহোম 'জীবন দীপ স্পেশাল কেয়ার অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রাইভেট লিমিটেড' (রেজি. নং - NH/S/34) - এ ভর্তি হয়।
ছেলেকে সুস্থ করে তোলার তাগিদে দিনমজুর রবিউলের বাবা তোফিজুল শেখের সাথে ডাক্তার বেরার চুক্তি হয় যে তিনি রবিউলের হাতে অপারেশন করবেন এবং 2/3 দিনের মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে এবং এর জন্য RSBY (রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বীমা যোজনা) কার্ড থেকে 26000 টাকা এবং নগদে 6000 মিলিয়ে সর্বমোট 31000 টাকা তাকে দিতে হবেI অনোন্যপায় রবিউলের বাবা শেষ পর্যন্ত তাতেই রাজি হয়ে যান।
রবিউলের অপারেশনের পর ভারী রক্তক্ষরণ শুরু হয় এবং রবিউলের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে। রবিউলের বাবা এবং মা বারবার নার্সিংহোমে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও অন্যান্যদের হাতে পায়ে ধরলেও তারা কর্ণপাত করে না। ঘটনার পাঁচ দিন পর 25শে নভেম্বর 2013 মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে থাকা ছোট্ট রবিউলকে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু হাসপাতালেও তার তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার
হিসেবে আশ্চর্যজনকভাবে থেকে যায় অমিয় কুমার বেরা, যিনি মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও যিনি আবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারি অধ্যাপকও বটে।
ধীরে ধীরে রবিউলের রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায় এবং তার জীবনের আশঙ্কা কেটে যায়। কিন্তু ততদিনে সে তার ডান হাতের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছে।
ডাঃ বেরা রবিউলের বাবা তোফিজুল শেখকে বলেন, রবিউলের হাত নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই, হাত ঠিক আছে এবং খুব শীঘ্রই সে তার ডান হাত ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারবে।
কয়েকদিন পর রবিউলের বাবা যখন দেখেন যে তার ছেলে তার হাত বা আঙ্গুল নাড়াতে পারে না এবং হাত তার কাঁধ থেকে শক্ত হয়ে গেছে, তখন তিনি বিষয়টি বারবার বেরাকে বলার চেষ্টা করলেও ডাক্তার বিষয়টি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেন। শেষপর্যন্ত মরিয়া হয়ে তিনি এ বিষয়ে ডাঃ বেরার কাছে ব্যাখ্যা চাইলে ডাক্তার আবার তাকে বলেন সবকিছু ঠিক আছে এবং রবিউলকে হাসপাতাল থেকে ছুটি নিতে বাধ্য করেন।
অবশেষে, মিডিয়া এই পুরো বিষয়টির খবর পায়, এবং স্থানীয় কিছু সমাজকর্মী এই নিঃস্ব হতদরিদ্র পরিবারটির পাশে দাঁড়ায়।
রবিউলের বাবা 16ই জানুয়ারী 2014 তারিখে তার ছেলের সুচিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড চেয়ে একটি প্রার্থনা জমা দেন - ততক্ষণে প্রায় 2 মাস চলে গেছে, ছোট ছেলেটি তখনো তার হাত-পা আঙ্গুল কিছুই নাড়াতে পারে না।
রবিউলের বাবা তোফিজুল শেখের ভাষ্যমতে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি মেডিক্যাল বোর্ডের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা ছোট্ট রবিউলের যথাযথ চিকিৎসা নিয়ে এখনও উদাসীন। ডাক্তার বা মেডিকেল বোর্ড কেউই রবিউলের অবস্থা বা তার চিকিৎসার পরবর্তী ধাপ ব্যাখ্যা করেননি। এমনকি কিছু ডাক্তার কিছু টাকার বিনিময়ে এই অধ্যায়টি বন্ধ করার জন্য রবিউলের বাবার উপর ক্রমাগত চাপ তৈরি করতে থাকেন । এমতাবস্থায় রবিউলের বাবা তার ছেলের অবস্থা নিয়ে সম্পূর্ণ বিভ্রান্ত এবং তার ছোট ছেলের ভবিষ্যৎ চিকিৎসা পদ্ধতি কী হবে তা নিশ্চিত করতে পারছেন না।
সমাজকর্মী মাসুদ হোসেন বলেন, “এটা অপ্রত্যাশিত এবং বিব্রতকর। রবিউলের কী হয়েছে বা কী অবস্থা তা নিয়ে এখনও অন্ধকারে রয়েছেন তার বাবা। ছোট্ট ছেলেটির সঠিক চিকিৎসা সম্পর্কে বেরা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একেবারেই উদাসীন। আমরা মানবাধিকার কমিশন, পাবলিক গ্রিভেন্স সেল এবং মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাব।"
বিশেষ সূত্রে পাওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায় ডাঃ বেরা স্বীকার করছেন যে তার ভুলের কারণে এমনটা হয়েছে এবং পরে চেষ্টা করা সত্ত্বেও পরিস্থিতি তার হাত থেকে বেরিয়ে গেছে।
পরে মানসিক অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত রবিউলের দিনমজুর বাবা সঙ্গে কোন এক অজ্ঞাত বোঝাপড়া করে নিতে বাধ্য হন।
প্রতিদিন লাইম লাইটে উঠে না আসা এরকম কথা শত ঘটনা ঘটে আমরা তার খোঁজ রাখি না।
মেডিকেল কাউন্সিলে নিবন্ধীকৃত একজন চিকিৎসকের অসাবধানতা এবং অবহেলা রবিউলকে আপাতত পঙ্গু করে দিয়েছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় সঠিক চিকিৎসা না হলে ছেলেটি স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যেতে পারে।
আমরা কি রবিউলদের মত পরিবারের, পীড়িতদের পাশে দাঁড়াবো না যাতে দুর্ভোগ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে ? প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।